শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে - শবে কদরের ফজিলত

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে তা আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদেরই জানা উচিত। রমজানের ২৬ তম দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ তম রজনীতে শবে কদরের ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের রাত নির্ধারিত হয়। এজন্য রমজান মাসের শেষ দশকের গুরুত্ব অনেক বেশি।
রমজান মাসের শবে কদরে অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল। এইজন্য শবে কদরের রাত প্রতিটা মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় রাত । তাই আমাদের জানতে হবে শবে কদর এবং শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্র :

শবে কদর কি

শবে কদর কথাটি হচ্ছে ফারসি শব্দ। শব অর্থ রাত বা রজনী, আর কদর অর্থ হচ্ছে সম্মান মর্যাদা ভাগ্য ইত্যাদি। আর শবে কদর মানে হচ্ছে সম্মানিত রাত বা ভাগ্য রজনী । শবে কদরের আরবি শব্দ হচ্ছে লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত বা ভাগ্য রজনী। এ রাতের এবাদত হাজার বছরের ইবাদতের সমান। এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,- তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর অনুসন্ধান কর। কারণ হচ্ছে এই  রাতের ইবাদত হাজার বছরের ইবাদতের সমান।

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে:

রমজান মাস প্রতিটা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসে শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে  তা সকল মুসলমানদের জানা উচিত। কেননা এই রাতে মুসলমানেরা সৌভাগ্য লাভের উদ্দেশ্যে রাত জেগে ইবাদত বন্দগী করে তাহলে আর তার পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং সে যেন নিষ্পাপ হয়ে যায়। এইজন্য সকলের জানা উচিত শবে কদর কত তারিখে এবং তা মনে রেখে যথাসময়ে ইবাদত বন্দেগী করা। 

আরো পড়ুন: জুম্মা দিনের গুরুত্বও ফজিলত

রমজান মাসের ২৭ তম রাত অর্থাৎ শবে কদরের রাত আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। এই রাত অন্যান্য রাত থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে খুঁজতে হয়। আর এই বিজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর নিহিত থাকে। এইজন্য রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো শবে কদরের রাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

২০২৪ শবে কদর বা লাইলাতুল কদর: 

শবে কদর কবে তার নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। আমরা সাধারণ মানুষ সাধারণত ২৭ তম রজনীকেই শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হিসাবে বিবেচনা করে থাকি। সেই হিসেবে শবে কদর ২৬ তম রমজান ২৭ তম রজনীকে বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ শবে কদর ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত। মহিমান্বিত রাতের গুণাবলী এতই বেশি যে তা সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রাতে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

২০২৪ শবে কদর বা লাইলাতুল কদর মুসলমানদের কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এই রাতটি যে মিস করবে তাকে এ রাত্রি পাওয়ার জন্য আবার ও তাকে একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।এই রাতে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এবং অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এই রাতে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। শবে কদরের রাত এমন একটি রাত যে ব্যক্তি এই রাতটি পেল এবং ইবাদাত বন্দেগি করতে পারল না সে খুবই হত ভাগ্য। যে ব্যক্তি এই রাতে নামাজ পড়ে, দোয়া করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই তার গুনাহ গুলোকে আল্লাহতালা ক্ষমা করে দেন এবং নিষ্পাপ বানিয়ে দেন।

কদরের ফজিলত সমূহ কি

শবে কদরের ফজিলত এবং তাৎপর্য অনেক। শবে কদর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ পুরস্কার । শবে কদর বান্দাদের জন্য ইবাদতের প্রথম সময় এই সময় যারা ইবাদত করবে তারা অসংখ্য সব অর্জন করতে পারবে। এই সুবর্ণ সুযোগ আল্লাহতালা একমাত্র তার বান্দাদের কে দিয়েছেন কেননা বান্দারা অনেক সময় অনেক পাপ কাজ করে থাকে যে পাপগুলো তারা ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময় পায় না এজন্য আল্লাহ এ সময়টাকেেউপযুক্ত সময় বানিয়ে দিয়েছেন। তাই সবার কর্তব্য এ রাতের এই মহিমান্বিত রাতের গুরুত্ব অনুমোদন করা।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন,- যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে ও সওব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,- রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে মানবজাতির শান্তির বার্তা হয়ে কোরআন নাজিল হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন,-রমজান মাসে যে ব্যক্তি শবে কদরের অনুসন্ধান করবে তার জন্য নেয়ামতের সব দরজা গুলো খুলে দেওয়া হবে।  

আরো পড়ুন: জুম্মা দিনের আমল সমুহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আরো বলেছেন,- তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকে বিজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদরকে অনুসন্ধান করো। আল্লাহ তায়ালা সহস্র মাস ইবাদত করার থেকে রমজান মাসে কদরের রাতে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা এই মাস সহস্র মাস হতেও উত্তম।

মহান আল্লাহ তা'আলা এই রাতের নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন আমি তা লাইলাতুল কদরে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। হে নবী আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কি। লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম। এই রাতে জিব্রাইল আলাই সালাম ও ফেরেশতারা তার রবের নির্দেশে প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য অবতীর্ণ হন। তাই বলা যায় শবে কদরের ফজিলত অনেক এবং আমরা যে এর ফজিলত সম্পর্কে জেনে যথাযথ নিয়ম মেনে তা পালন করতে হবে।

শবে কদরের রাতে নামাজ পড়ার নিয়ম:

শবে কদরের রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ যথাযথ সুন্দর ও মনোযোগ সহকারে পড়তে হয় । শবে কদরের নামাজ দুই রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় ততই ভাল। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাস, সূরা কদর, সূরা তাকাসুর মিলিয়ে পড়লে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। এভাবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত বেশি নামাজ আদায় করা যায় ততই ভালো। 

কদরের রাতে নামাজের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত করা সালাতুল তওবা, সালাতুত তসবি, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে। রাতে বেশি বেশি করে দোয়া নামাজ পড়তে হবে দোয়া করতে হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তিনি জিজ্ঞেস করেন,- ইয়া রাসুল আল্লাহ শবে কদরের রাতে কোন দোয়া বেশি পড়বো!

 তিনি বলেন- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফুয়ান্নি ইয়া গফুরু ইয়া গফুরু ইয়া গফুরু। অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন তাই আমাকে দযা করে ক্ষমা করুন।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত :

আরবিতে, নাওয়াইতুয়ান উছল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রকাতায় সলাতিক লাইলাতুল কদরিনফলী হান ইলাজিহাতিল কাবাতিস শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলায়, আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার 

শবে কদরের রাতের আমলসমূহ: 

শবে কদরের রাত একটা বিশেষ রাত আর এই রাতে বিশেষ কিছু আমলের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন । শবে কদরের ফজিলতপূর্ণ এই মাসে। এই রাতে যারা শবে কদর পাওয়ার ও শবে কদরকে পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগি করবে আল্লাহতালা তাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। শবে কদরের  রাতে কি কি আমল করতে হয় চলুন জানা যাক সে সম্পর্কে বিস্তারিত

  • শবে কদরের রাতে বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হয়। তাহলে আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় বান্দা হওয়া যায়।
  • এইরাতে বেশি বেশি করে জিকির করতে হয় সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ এগুলো পাঠ করে।
  • শবে কদরের রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হয় ।
  • শবে কদরের রাতে জিকিরের পাশাপাশি সাইয়েদুল ইস্তেগফার, দুরুদ শরীফ, সূরা ইখলাস বেশি বেশি পড়তে পারেন।
  • এই রাতে নফল নামাজের পর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারেন
  • শবে কদরের রাতে আরো একটি দোয়া আছে যেটা আপনি বেশি বেশি করে পড়তে পারেন সেটি হচ্ছে আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফওয়াননি ইয়া গফুরা গফুরু ইয়া গফুর।

উপসংহার:

শবে কদরের রাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত রাত যার গুরুত্ব ফজিলত সকলেরই জানা উচিত। তাই আমরা এই পোস্টটিতে শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে এবং শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে, শবে কদর কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা পড়ে অনেক উপকৃত হবেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url